আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল থেকে শুরু করে সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি পর্যন্ত বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এনিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। কারণ, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি সাংবিধানিক অধিকার।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলে কংগ্রেসের উচ্চ ও নিম্নকক্ষের অনুমোদন, এমনকি আদালতেও মীমাংসার প্রয়োজন হতে পারে। এদিকে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দেশটির ২২টি অঙ্গরাজ্যে মামলা হয়েছে।
জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। তবে, এই সুবিধা বিলোপ করতে চান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দেশটিতে কোনো শিশুর জন্ম হলে জন্মসূত্রে সে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে। এ ক্ষেত্রে ওই শিশুর বাবা-মা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তা বিবেচ্য বিষয় হবে না।
এই নিয়মের পরিবর্তন আনতে চান ট্রাম্প, যাতে নথিবিহীন; অর্থাৎ অবৈধ কোনো অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান প্রসব করলে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না।
জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব সুবিধা নিয়ে নতুন নিয়ম ট্রাম্প কীভাবে কার্যকর করতে চান, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সংরক্ষিত একটি বিষয়।
ট্রাম্প এই সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে চাইলে, তাকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
এরপরও ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েই ফেডারেল সরকারের সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো অবৈধ অভিবাসী অথবা সাময়িক ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বা পর্যটনসহ বিভিন্ন ভিসায় দেশটিতে অবস্থান করছেন এমন কেউ সন্তান জন্ম দিলে সেই শিশুকে যেন মার্কিন নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথি দেয়া না হয়।
অর্থাৎ এখন থেকে ৩০ দিন পর যে শিশু জন্ম নেবে, তাদের বাবা-মা দুজনের একজন যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হন বা গ্রিন কার্ডধারী না হন, তাহলে সেই শিশুকে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ও ভিসা দেয়া হবে না।
এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তারা বলছে, ট্রাম্পের এ আদেশ অসাংবিধানিক। এমনকি এর বিরুদ্ধে মামলা করবে তারা।
কারণ ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের জীবন ধ্বংসে তৎপরতা শুরু করেছে। এটি রীতিমতো আমেরিকার মূল্যবোধের বেপরোয়া ও নির্মম প্রত্যাখ্যান।
এক শতাব্দীরও আগে অর্থাৎ ১৮৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আদেশে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীতে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার দেয়া হয়েছে।
এর ব্যতিক্রম হবে শুধু বাবা–মা যদি বিদেশি কূটনীতিক হন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী তাঁরা কূটনৈতিক দায়মুক্তি পেয়ে থাকেন। তাই, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ দেয়ার এখতিয়ার আছে কি না, বিষয়টি আদালতে মীমাংসা হবে কি না, তা–ও এখনো নিশ্চিত নয়।