স্টাফ রিপোর্টার :
তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপন্থীদের মধ্যে আবারও উত্তেজনা বিরাজ করছে। আজ শুক্রবার সকালে কাকরাইলের মারকাজ মসজিদে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন সাদপন্থীরা। পূর্ব ঘোষণা দিয়েই তারা দখলে নিয়েছে মারকাজ মসজিদ। এ জন্য ভোর থেকে ওই স্থানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
সকাল ৮টার পরে প্রবেশ করেন সাদ পন্থীদের। এ সময় অসংখ্য লোকের জমায়েত হয়। এ মসজিদে নিয়ম হলো ১৪ দিন থাকবে সাদপন্থীরা ২৮ দিন থাকবে জুবায়ের পন্থীরা।
জানা যায়, ২০১৭ সালের নভেম্বর দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ নেয়। সেদিন কাকরাইলে দু’দল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি হয়। চরম বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় গত ৭ বছর ধরে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কাকরাইল মসজিদের এক অংশে জুবায়েরপন্থিরা ৪ সপ্তাহ ও সাদপন্থিরা দুই সপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তবে মসজিদের অপর অংশ জুবায়েরপন্থিরা ১২ মাসই নিজেদের দখলে রাখেন। সাদপন্থিদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হেফাজত সমর্থিত জুবায়েরপন্থিরা বেশি সুবিধা ভোগ করে আসছেন। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ নিয়েও দুই পক্ষের বিরোধ দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে।
গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা দুই দফায় আয়োজিত হবে। প্রথম দফার ইজতেমা শুরু হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় দফায় শুরু হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।
এদিকে, গত ১২ নভেম্বর ঢাকার কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠে তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীদের সুযোগ দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে জুবায়েরপন্থীরা। এক সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, ‘সাদপন্থীরা হাদিসের অপব্যখ্যাকারী। তাদের দাওয়াত ও তাবলিগে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই।’
পরের দিন ১৩ নভেম্বর পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থীরা জানান, কাকরাইল মসজিদের একটি অংশে এমনিতেই জুবায়েরপন্থীরা সারা বছর মাদরাসার নামে আলাদা অবস্থান নিয়ে থাকেন। কিন্তু হেফাজতপন্থী আলেমদের সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রেক্ষাপটে জুবায়েরপন্থীরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাকরাইল মসজিদ স্থায়ীভাবে দখল নেওয়ার ঘোষণা দেয়ায় ভয়াবহ সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।
সাদপন্থীরা আরও জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার। আলেম-ওলামারা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে পূর্বের মতো কাকরাইল মসজিদ, বিশ্ব ইজতেমা ও সারাদেশে আলাদা আলাদা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংঘাত হবে না।
এছাড়া, কাকরাইল মার্কাজ (তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়) সম্পূর্ণভাবে নিজামুদ্দীনের অনুসারীদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়াসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।
১৩ নভেম্বর রাতে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘কাকরাইল মসজিদ ও তাবলিগ বিষয়ে জরুরি বিবৃতি’তে জানানো হয়, ১২ নভেম্বর বর্তমান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের নেতাদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যৌথভাবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তাবলিগের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ফলে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদে অবস্থানের বিষয়ে পূর্বের নিয়ম মেনে নিয়ে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ ও কাকরাইলের পক্ষ থেকে সবাই একমত পোষণ করেন।
জানা গেছে, মতাদর্শগত মিল না হওয়ায় যখন তাবলিগ জামাত প্রকাশ্য দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তখন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুই পক্ষকে আলাদা আলাদাভাবে কাকরাইলের মারকাজে থাকার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তখন বলা হয়েছিল, জুবায়েরপন্থীরা থাকবে একমাস; বিপরীতে সাদপন্থীরা অবস্থান করবে ১৪ দিন।
সাদপন্থীদের ভাষ্য, সমঝোতা ও ঝামেলা এড়াতে বৈষম্য হলেও তারা সেই প্রস্তাব মেনে মসজিদে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে জুবায়েরপন্থীরা সারা বছরই মসজিদে অবস্থান শুরু করে। সাদপন্থীদের জন্য নির্ধারিত ১৪ দিনের সময় তাদের ছেড়ে দেয়া হতো মসজিদের একটি কর্নার। অনেক চেষ্টা চালিয়েও ১৪ দিনের পুরোটা সময় তাদের সাথীরা মসজিদজুড়ে থাকতে পারেনি।
এদিকে মসজিদ এলাকায় ভোর থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
রমনা জোনের ডিসি মো. মাসুদ আলম (বিপিএম) জানান, জুবায়ের পন্থীরা চার সপ্তাহ অবস্থান করেছিল। আজ তারা মসজিদে নিজেদের অবস্থান ছেড়ে দিল। এখন দুই সপ্তাহ অবস্থান করবে সাদ পন্থীরা। যাতে করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো অবনতি না ঘটে সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্বের মতই তারা যেমনটি নিয়ম ছিল যে সাদপন্থীরা ২ সপ্তাহ এবং জুবায়ের পন্থীরা চার সপ্তাহ অবস্থান করবে। আজকের শান্তিপূর্ণভাবে বের হয়ে গিয়েছে জুবায়েরপন্থীরা, তারপর সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করেছে সাদপন্থীরা।