অনলাইন ডেস্ক :
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল প্রণীত মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে ভর্তি নীতিমালা-২০২৫ প্রকাশ করা হয়েছে। আর এবার নীতিমালায় কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ প্রাপ্তির ওপর আগে ২০০ নম্বর ধরা হলেও এবার তা কমিয়ে ১০০ নম্বর ধরা হয়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, এ নীতিমালা ‘মেডিকেল/ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা-২০২৫’ নামে অভিহিত হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) প্রণীত নীতিমালা দেশের সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস-বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।
প্রার্থীর যোগ্যতা উল্লেখ করে বলা হয়:-
১.আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। কেবল সরকার কর্তৃক বিদেশিদের সংরক্ষিত আসনের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
২. বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান দুটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। দুই পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ পয়েন্ট হতে হবে। প্রার্থীকে নিয়মিত এসএসসি ও সমমান ‘ও’ পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং এইচএসসি অথবা সমমান ‘এ’ লেভেল পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগসহ অবশ্যই ফিজিকস (পদার্থবিজ্ঞান), কেমিস্ট্রি (রসায়ন) ও বায়োলজিতে (জীববিজ্ঞান) ন্যূনতম জিপিএ–৪ পয়েন্ট থাকতে হবে।
৩. সরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিটে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি এবং এইচএসসি/এ লেভেল অথবা সমমান পরীক্ষায় জিপিএ ৫ স্কেলে মোট জিপিএ ৯ এবং জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৪ পয়েন্ট থাকতে হবে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিটে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে এসএসসি বা যে দেশে এসএসসি পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষা নেই সে দেশের দশম শ্রেণি/ও লেভেল এবং এইচএসসি/এ লেভেল অথবা সমমান পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৭ এবং জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে।
৪.পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ সকল উপজাতি ও পার্বত্য জেলার অ–উপজাতীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা দুটিতে মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮ হতে হবে। তবে এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩ দশমিক ৫ এর কম থাকলে আবেদন করা যাবে না। এক্ষেত্রে জীববিজ্ঞানে জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে।
৫. যে শিক্ষাবর্ষের জন্য মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করবেন সেই ইংরেজি বর্ষ বা পূর্ববর্তী ইংরেজি বর্ষে প্রার্থীকে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে তাঁর এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাসের পূর্ববর্তী তিন শিক্ষাবর্ষের মধ্যে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করতে হবে।
প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া:- এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ মোট ১০০ নম্বর হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ এবং ভর্তির জন্য জাতীয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। কোনো শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস/বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি পরীক্ষায় সদ্য উত্তীর্ণদের এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-এর ১০ গুণ–এর সঙ্গে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-এর ১০ গুণ এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের যোগফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। তবে পূর্ববর্তী বছরের এইচএসসি পাস প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৩ নম্বর এবং পূর্ববর্তী বছরের সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৬ নম্বর কেটে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।
সরকারি ও বেসরকারি সব মেডিকেল কলেজের জন্য একই সঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ৩০ দিন পর সরকারি ও বেসরকারি সব ডেন্টাল কলেজ এবং ডেন্টাল ইউনিটের জন্য একই সঙ্গে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষা নম্বর বণ্টন: লিখিত ভর্তি পরীক্ষা ১০০টি প্রশ্নের প্রতিটি ১ নম্বর করে মোট (এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস অনুযায়ী) ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পদার্থবিদ্যায় ২০, রসায়নবিদ্যায় ২৫, জীববিজ্ঞানে ৩০, ইংরেজিতে ১৫ ও সাধারণ জ্ঞানে ১০, মোট ১০০ নম্বর। লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি ভুল উত্তর প্রদানের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম পেলে অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম পেলে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল: দেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি- নাতনির কোটা বাতিল করা হয়েছে। এতে শুধু মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ কোটার অধীনে আসন শূন্য থাকলে সাধারণ মেধা কোটা থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে এই কোটার আসন পূরণ করার শর্ত দেওয়া আছে। এর আগে ২০২৪ সালের ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং সন্তানের সন্তানাদির জন্য ২ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিল।
নীতিমালায় বলা হয়, সদ্য এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ’র ১০ গুণের সঙ্গে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ’র ১০ গুণ এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের যোগফলের ভিত্তিতে মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। তবে আগের বছরের এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় পাশ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৩ নম্বর এবং পূর্ববর্তী বছরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ/ডেন্টাল কলেজ/ডেন্টাল ইউনিট- এ ভর্তিকৃত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট নম্বর থেকে ৬ নম্বর কেটে মেধা তালিকায় অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।