মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী:
৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ সরকার পতনের পর পরই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতি জোরপূর্বক দখলে নেয় কতিপয় আ’লীগের দোসর শামীম রেজা হিটলার ও বুলবুল গং। আ’লীগের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী হিটলার ও বুলবুল বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে সদর দলিল লেখক সমিতি দখলে নিলে সাধারণ সদস্যদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অন্যান্য সদস্যদের সম্মতি ছাড়াই হিটলার গং কমিটি ঘোষণা করেন। এ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের দখলদারত্বের সংবাদ প্রকাশ হলে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই মর্মে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন রাজশাহী মহানগর বিএনপি। আড়াই মাস দ্বায়িত্বে থেকে তারা সাধারণ সদস্যদের জমাকৃত কয়েক লক্ষ টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে শুরু করেন তালবাহানা।
জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়ে আব্দুর রকিব বুলবুল ও শামিম রেজা হিটলার বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে বহিরাগত শতাধিক সন্ত্রাসীদের নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে চরম ভীতির সৃষ্টি করেন এবং সমিতির নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সেই প্রেক্ষিতে সমিতির নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি পদত্যাগ করলে সমিতির ১৪৫ জন সদস্যদের মধ্যে মাত্র ৩ জন সদস্যের সমর্থনে আব্দুর রকিব বুলবুল ও শামীম রেজা হিটলার নিজেরাই নিজেদের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ঘোষণা করে জোরপূর্বক সমিতি দখলে নেয়। তাদের এই দখলদারিত্বে সাধারন সদস্যরা খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন। দখলবাজ বুলবুল-হিটলার কমিটি নিজেদের তথাকথিত বিএনপির কর্মী ও সমর্থক দাবি করায় এবং সমিতির কার্যালয়ে সবসময় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বসিয়ে রাখার কারণে সিংহভাগ সদস্যরা ক্ষুব্ধ থাকলেও ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি।
তবে গত ১২ অক্টোবর শীর্ষ জাতীয় দুটি পত্রিকায় বুলবুল-হিটলার গং এর জোরপূর্বক সমিতি দখলকাণ্ড ও নানা কুকির্তী নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে শামীম রেজা হিটালার গং আ’লীগের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী ও দখলবাজ হিসেবে তথ্যসহ প্রমাণিত হওযায় গত ২০ অক্টোবর রাজশাহী মহানগর বিএনপি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিশ্চিত করে; দখলবাজ কমিটির শামীম রেজা হিটলার গংদের সাথে মহানগর বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই। গত ১৭ বছরে ভোটের আন্দোলনে বিএনপির সাথে তারা ছিল না। সমিতির সদস্যদের কাছে সামগ্রিক বিষয় প্রতিয়মান হলে তারা হিটলার গংদের নানা স্বেচ্ছাচারিতা, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ও সাধারণ সদস্যদের প্রতি সকল অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করে এবং দখলবাজ বুলবুল-হিটলার কমিটির কাছে সমিতির সদস্যদের জমাকৃত অর্থের বা আয়-ব্যয় এর হিসাব চাইলে তারা আয়-ব্যয় এর হিসাব দিতে গড়িমসি করলে ক্ষুব্ধ সদস্যরা গত ২৮ অক্টোবর সমিতির সভায় ১১৩ জন সদস্যের প্রত্যক্ষ সম্মতির ভিত্তিতে দখলবাজ বুলবুল-হিটলার কমিটিকে বিলুপ্ত করেন। পরে মোঃ হাফিজুল্লাহ পারভেজ জুয়েলকে আহ্বায়ক ও মোঃ সুমন রেজাকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। বর্তমানে দলিল লেখক সমিতিতে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাহত না হয় সেই কারণে সেনাবাহিনীর নির্দেশনা মোতাবেক দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার লক্ষ্যে এবং সদস্যদের সম্মতি-সমর্থনের ভিত্তিতে এই আহ্বায়ক কমিটি সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
অপরদিকে বুলবুল-হিটলার গং দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সদস্যদের জমাকৃত কয়েক লক্ষ টাকার হিসাব বুঝিয়ে না দিয়ে তারা বিভিন্ন রকমের তালবাহানা শুরু করেছেন। বিএনপির ২/৩ জন নেতার নাম ভাঙিয়ে সাধারণ সদস্যদেরকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি প্রদান করছেন এবং সমিতির সাধারণ সদস্যদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নোংরা প্রোপাগন্ডা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের এসকল কর্মকাণ্ডের জন্য সমিতির সাধারণ সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর আগে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লিটনের পক্ষে নৌকা প্রতীকের মিছিলে হিটলারকে দেখা যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবাদে হিটলার জানিয়ে ছিলেন দলিল লেখক সমিতির নেতারা জোর করে তাকে মিছিলে নিয়ে গেছিল। কিন্তু আরও একটি ভিডিওতে দেখা যায় ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহুল আমিন টুনুর সাথে লিটনের নৌকা প্রতীকের প্রচারণা করছেন হিটলার গং। সমিতির একজন সদস্য হিটলারকে চ্যালেঞ্জ করেছিল ২০২৩ সালের ২১শে জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে বিএনপি’র কোন প্রোগ্রামে তার উপস্থিতির ছবি বা ভিডিও থাকলে দেখানোর জন্য কিন্তু হিটলার গং তা দেখাতে পারেন নাই। বরং সেই সময়ের আগে পর্যন্ত সাবেক মেয়র লিটনের সাথে তার একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে।
জানতে চাইলে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি আহ্বায়ক হাফিজুল্লাহ পারভেজ জুয়েল বলেন, গত ২৮শে অক্টোবর সমিতির ১১৩ জন সদস্যের প্রত্যক্ষ সম্মতি ও সমর্থনে রেজুলেশনের মাধ্যমে অবৈধ দখলবাজ বুলবুল-হিটলারের নেতৃত্বে গঠিত আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে আমার ও সুমন রেজার নেতৃত্বে বর্তমান আহবায়ক কমিটিকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি সমিতির সকল নিয়ম-কানুন ও হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সকল সদস্যের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিগত আহবায়ক কমিটির নিকট হইতে তাদের দায়িত্ব পালনের সময়ের অর্থাৎ ১৫/০৮/২০২৪ ইং হইতে ২৮/১০/২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত সমিতির আয় ও ব্যয়ের হিসাবগুলো বুঝে নেয়ার জন্য গত ০৬/১১/২০২৪ ইং তারিখে সময় নির্ধারণ করে সভা আহ্বান করা হয়। কিন্তু সেদিন তারা সমিতির আয় ও ব্যয়ের লেজার ও রেজিস্ট্রার ব্যতীত মৌখিকভাবে আয় ও ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করলে উপস্থিত সদস্যগন লেজার ও রেজিস্ট্রার বিহীন আয় ব্যায়ের হিসাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে তারা গত ১৭/১১/২০২৪ ইং তারিখে তাদের কাছে সংরক্ষিত লেজার ও রেজিস্ট্রার আমাদের নিকট হস্তান্তর করলে তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে গত ২১/১১/২০২৪ ইং সভার তারিখ নির্ধারন করা হয়। ওই সভায় সাবেক আহবায়ক কমিটির শামীম রেজা হিটলার উপস্থিত না হওয়ার কারণে আব্দুর রকিব বুলবুল সদস্যদের উদ্দেশ্যে হিসাব উপস্থাপন করেন।
কিন্তু সদস্যগণ হিসাব যাচাই করে কয়েক লক্ষ টাকার ঘাটতি দেখতে পান ও কয়েক লক্ষ টাকা হিসাবে লিপিবদ্ধই হয় নাই মর্মে প্রতিয়মান হলে উপস্থিত সদস্যগণ ঘাটতিসহ সকল টাকা তার কাছে থেকে পুঁজিয়ে চাইলে তিনি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন এই কয়েক লক্ষ টাকা শামিম রেজা হিটলারের কাছে আছে এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এহেন পরিস্থিতিতে আব্দুর রকিব বুলবুল সদস্যদের জমাকৃত অর্থ পুঁজিয়ে দেয়ার জন্য কয়েকদিন সময় প্রার্থনা করলে সাধারণ সদস্যগন সর্বসম্মতিক্রমে সময় মঞ্জুর করেন। এতকিছুর পরেও শামিম রেজা হিটলার গং ২/৩ জন নেতাকে ম্যানেজ করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে ও সমিতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যেকোন প্রকার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্যে প্রয়োজনে রাজশাহী সদর দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।