অনলাইন ডেস্ক :
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের দুদিনের মধ্যে পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লোৎসের চূড়ায় পৌঁছেছেন বাবর আলী। আর এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশি হিসেবে এক অভিযানে হিমালয়ের দুই শৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড গড়েছেন চট্টগ্রামের এই পর্বতারোহী। একে পর্বতারোহণের পরিভাষায় ‘ডাবল হেডার’ বলা হয়।
সফল এই অভিযান সম্পন্ন করার পর দেশের ফেরার পালা বাবরের। এর আগে রোববার সকালে ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছান বাবর। এর মধ্য দিয়ে ১১ বছর পর বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আবার কোনো বাংলাদেশির পা পড়ে।
এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করেন। তারা হলেন- মুসা ইব্রাহিম, এম এ মুহিত (দুবার), নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরীন ও মো. খালেদ হোসাইন।
এভারেস্ট থেকে নেমে এসে রোববার রাতে ক্যাম্প-৪ এ বিশ্রাম নেন বাবর আলী। তারপর সোমবার (২০ মে) রাতে লোৎসের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এর আগে বাবর আলীকে অভিনন্দন জানিয়ে এভারেস্ট জয়ী আরেক বাংলাদেশি নিশাত মজুমদার ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘ভাই বাবর আলী, একসাথে দুই দুটি আট হাজার মিটারের চূড়ায় আরোহণ। তুমি আমাদের জন্য নতুন একটি বেঞ্চমার্ক তৈরি করে দিলে। ‘
এ অভিযান পরিচালনা করছে ট্রেকিং ও পর্বতাভিযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্নোয়ি হরাইজন। তাদের তত্ত্বাবধানে এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানে যান বাবর। এভারেস্টের মত লোৎসে অভিযানেও বাবরের সঙ্গে ছিলেন তার শেরপা বীর বাহাদুর তামাং।
ফরহান জামান বলেন, ‘লোৎসে সামিটের পর বাবর রেডিওতে সামিটের সংবাদ পাঠান বেজক্যাম্পে। বেজক্যাম্পের দায়িত্বশীলরা ওই খুশির খবর পৌঁছে দেন আমাদের কাছে। ‘
ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাবর আলি জোড়া এই আট হাজারী পর্বত (এভারেস্ট এবং লোৎসে) শীর্ষ স্পর্শ করে বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। ‘
বাবরের এভারেস্ট জয়ে চট্টগ্রামে এরিমধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। কারণ ৩৩ বছর বয়সী বাবর আলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুডিশ্চর গ্রামে। পেশায় তিনি চিকিৎসক। এমবিবিএস ডিগ্রি নেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। ওই মেডিকেলের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। চিকিৎসক হিসেবে সফল হলেও তার নেশা ছিল পাহাড় ডিঙানো। এটা ছোটবেলা থেকেই। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে তরুণ বয়সেই ঘুরে বেড়াতেন।
ফেইসবুকে তিনি নিজের পরিচয় দেন এভাবে- ‘পেশায় ডাক্তার, নেশায় পাহাড়ি’। চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমারসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। এই ক্লাবের হয়ে ২০১৪ সাল থেকে হিমালয়ের নানা শিখরে চালান অভিযান।
২০১৭ সালে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশী শহরের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন বাবর। ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২২ হাজার ৩৪৯ ফুট উচ্চতার হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম আরোহণ করেন তিনি।
এভারেস্ট জয়ের আগে বেশ কয়েকটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন বাবর। তার মধ্যে রয়েছে সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা সহ আরও কয়েকটি।