এম,এ বারী নাচোল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি :
রাজশাহী তানোর থানার ১নং কলমা ইউনিয়নের দিয়ারা নটিপাড়া গ্রামের সাথী বেগম (২২) নামক এক গৃহবধুকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে স্বামী মোঃ আয়াতুল্লাহ(২৬) বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
মোঃ আয়াতুল্লাহ(২৬) পিতা- গোলাম মোস্তফা, মাতা-মালেকা বিবি, গ্রাম -দিয়াড়া নটিপাড়া,কলমা,তানোর,রাজশাহী এর সাথে ৭বছর পূর্বে সাথী বেগম, পিতা-শহিদুল ইসলাম, হাকরইল, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ হয়। তাদের ঘরে, মোঃআবু সায়েদ(৩) ও মোসা-আমেরুন নেশা (৪মাস) দুজন সন্তান রয়েছে। উক্ত মৃত ব্যাক্তির স্বামী আয়াতুল্লাহ একটি ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করে ও বিভিন্ন সময় টিকটক করে।
আরো জানা গেছে যে, টিকটকার আয়াতুল্লাহ একাধিক নারীর সাথে পরকীয়া করেন এবং মাদক সেবন করে। টিকটকার আয়াতুল্লাহ দরিদ্র পরিবারের হওয়ার ফলে একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক রক্ষার্থে নিজকে ভাইরাল করতে ও মাদকের টাকার জন্য স্ত্রী সাথী বেগমকে, বিভিন্ন সময় শারীরিক-মানসিক ভাবে নির্যাতন ও প্রান নাশের হুমকি প্রদান করতো। যেহতু মেয়ের দুইটা সন্তান রয়েছে তাই মেয়ের সংসার রক্ষার্থে মেয়ের বাবা, জামাই (আয়াতুল্লাহ) কে বিভিন্ন সময় নগদ অর্থ ও চাল-ডাল ইত্যাদি প্রদান করতো। এত কিছু দেওয়ার পরেও, প্রাণ রক্ষা হলো না সাথী বেগমের। উল্লেখ্য যে, স্ত্রী সাথী বেগমকে শারীরিক নির্যাতনের জন্য স্বামী আয়াতুল্লাহর একাধিক বার গ্রাম্য শালিস হয়েছিল।
থানার এজাহার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায় গত- (২৪ শে জুলাই ২০২৪) বুধবার আনুমানিক বেলা ১১টায় মৃত সাথী বেগম তার নিজ বাড়ির বারন্দায় সবজি কাটার সময় স্বামী আয়াতুল্লাহর সাথে ঝগড়া-বিবাদ তৈরি হয়।ঝগড়া-বিবাদের একপর্যায়ে মৃত নারীর স্বামী আয়াতুল্লাহ পূর্র-পরিকল্পিতভাবে উক্ত ঘটনাস্হলে সাথী বেগমের শরীরের সামনের অংশে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে তার হাতে থাকা গ্যাস লাইট দিয়ে সাথী বেগমর শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়। উক্ত আগুনে সাথী বেগমের শরীরের মুখ হতে পায়ের হাটু পর্যন্ত এবং দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত পুড়ে ঝলসে যায়। সাথী বেগম প্রাণে বাঁচার জন্য আত্মচিৎকার করিলে পরিবারের লোকজনসহ ও স্হানীয় লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে তাকে দ্রুত মাইক্রোবাসযোগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ বিষয়ে মৃত সাথী বেগমের বাবা সাংবাদিকদের জানান,আয়াতুল্লাহ এর ছোট ভাই মোঃ আব্দুল্লাহ আমার স্ত্রীকে ফোন করে বলেন যে আপনার মেয়ে গ্যাসের আগুনে পুড়ে গেছে মেডিকেলে আছে ।
এ সংবাদ পেয়ে আমি আমার স্ত্রী ও আমার ছেলে সাগর আলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আমার মেয়েকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখি।পরবর্তীতে রুগীর অবস্থা আশংকাজনক হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার রুগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকাতে রেফার্ড করিলে রুগি নিয়ে রুগির মা-বাবা, আসামী ও তার ছোট ভাই মোঃ আব্দুল্লাহ (২৪শে জুলাই-২০২৪) বুধবার বিকেল আনুমানিক ৪ টায় ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। পথিমধ্যে রাত আনুমানিক ১০:৩০ মিঃ সাভার থানার হেমায়েতপুর এলাকায় পৌঁছালে রুগী (সাথী বেগম) এ্যম্বুলেন্সের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করিলে লাশসহ রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওনা করিয়া তানোর বাজারে (২৫শে জুলাই) বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ৭ঃ২০ মিঃ আসামী মৃত সাথী বেগমের স্বামী মোঃ আয়াতুল্লাহ জরুরী প্রয়োজনে তানোর বাজারে নেমে যায়। পরবর্তীতে একই তারিখ তানোর থানায় (রাজশাহী) লাশ নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রথমিক ভাবে এটি হত্যা ধারণা করে একটি এজাহার দায়ের করা হয় এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। এবং আসামী মোঃ আয়াতুল্লাহকে তানোর থেকে গ্রেপ্তার করে জেল-হাজতে প্রেরন করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফন-কাফন করা হয়।
এ বিষয়ে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহিম সাংবাদিকদের জানান প্রাথমিক ভাবে হত্যা বলে ধারনা করা হচ্ছে তদন্ত শেষে আসল ঘটনা জানা যাবে ও মালার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান ঘটনাস্হল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং কিছু আলামত, পেট্রোল এর বোতল লাঠি ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী সার্কেল অফিসার মোঃ সোহেল রানা বলেন, উক্ত ঘটনার একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে আমরা গভীরভাবে তদন্ত করছি এবং তদন্ত শেষে আসল ঘটনা উদঘাটন হবে ইনশাল্লাহ।