অনলাইন ডেস্ক :
গত প্রায় দুই মাস মাঠে থাকার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্বাহী বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
এই ক্ষমতাবলে সেনা কর্মকর্তারা আগামী দুই মাস ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
১৯৮৯ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬টি ধারায় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ধারাগুলো হলো—৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারা।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই বিচারিক ক্ষমতা পাওয়ার পর এখন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে, সেনাবাহিনীকে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি লিখেছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নতুন সরকার গঠন হলেও, মাঠ পর্যায়ে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি। এই সংকট কাটাতে সেনাবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকলে মাঠের পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
বিচারিক ক্ষমতায় কী কী করতে পারবেন-
ধারা ৬৪: ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধ সংঘটনকারীকে গ্রেপ্তার করার বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এবং হেফাজতে রাখার ক্ষমতা।
ধারা ৬৫: গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা বা তার উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিতে পারবেন এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারবেন।
ধারা ৮৩: অধিক্ষেত্রের বাইরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারবেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের যেকোনও স্থানে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পারবেন সেনা কর্মকর্তারা।
ধারা ৮৪: অধিক্ষেত্রের বাইরে পরোয়ানা কার্যকর করতে পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারবেন।
ধারা ৯৫(২): নথিপত্র ইত্যাদির জন্য ডাক ও টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুসন্ধান এবং আটক করার ক্ষমতা।
ধারা ১০০: ভুলভাবে দোষী ব্যক্তিদের হাজির করার জন্য অনুসন্ধান-ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা। অর্থাৎ বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা যেকোনো স্থানে তল্লাশি করতে পারবেন। কাউকে অপহরণ বা জোর করে কোথাও আটকে রাখার খবর পেয়ে সেনা কর্মকর্তারা সেখানে তল্লাশি করতে পারবেন।
ধারা ১০৫: সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে যে কোনো স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তিনি সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন।
ধারা ১০৭: শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।
ধারা ১০৯: ভবঘুরে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।
ধারা ১১০: অভ্যাসগত অপরাধীর কাছ থেকে সদাচরণের জন্য মুচলেকা গ্রহণ।
ধারা ১২৬: সদাচরণের নিশ্চয়তা প্রদান করা ব্যক্তির মুচলেকা বাতিল করে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার ক্ষমতা।
ধারা ১২৭: বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশদানের ক্ষমতা।
ধারা ১২৮: বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।
ধারা ১৩০: বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।
ধারা ১৩৩: স্থানীয় উপদ্রবে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।
ধারা ১৪২: জনসাধারণের উপদ্রবের ক্ষেত্রে অবিলম্বে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গত ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করে সরকার।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর আট আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।