অনলাইন ডেস্ক :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (৫ আগস্ট) পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ঢাকার থানাগুলো পুলিশ শূন্য হয়ে পড়ে। শুধু থানা নয়, পুলিশের সব ইউনিটই ফাঁকা হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে ডাকাতির আতঙ্ক নিয়ে রাত পার করছে রাজধানীবাসী। ডাকাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে করা হয়েছে মাইকিংও।
বুধবার (৭ আগস্ট) রাত ১২টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আরশিনগর, আটিবাজার, নয়াবাজার, বসিলা, বসিলা মেট্রো হাউজিং, মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিং, শেখেরটেক, জিগাতলা, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ এলাকা, শনিরআখড়া, মিরপুরের পল্লবী, মিরপুর ১০, ইসিবি চত্বর এলাকা, উত্তরার ৮-৯, ১০-১১ নম্বর সেক্টরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
আটকদের মধ্যে বসিলা এলাকা থেকে চারজন এবং মিরপুর থেকে ১৭ জনকে এলাকাবাসী আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। তবে ডাকাতদের এলোপাতাড়ি অস্ত্রের আঘাতে মিরপুরের ইসিবি চত্বর এলাকায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু তাদের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি। মোহাম্মদপুর এলাকায় পাঁচজনকে অস্ত্রসহ আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাদেরকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও উত্তরা এলাকায় কয়েকজন আটক করেছে এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, বসিলা মেট্রো হাউজিং, সিটি হাউজিংয়ে ডাকাত ঢুকেছিল। এ সময় তারস মেট্রোর কয়েকটা বাসা থেকে অস্ত্র ধরে নগদ টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে যায়। এরপর সেনা সদস্যরা চলে আসায় আবার সিটি হাউজিং এ ঢুকে পড়ে। তবে সিটি হাউজিংয়ের কারো বাসায় ঢুকতে পারেনি। এর আগেই দুই জনকে ধরতে পারেন এলাকার লোকজন। বাকিরা পালিয়েছে। এলাকাবাসী সবাই নিজ নিজ বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। যারা ডাকাতি করতে এসেছিল বেশিরভাগ টোকাই এবং উঠতি তরুণ। এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে খবর পেয়ে মসজিদের মাইকে সতর্ক করা হয়।
জানা গেছে, বুধবার রাত নয়টার দিকে মিরপুরের ইসিবি চত্বরের একটি টাওয়ারে ঢুকে শতাধিক যুবক। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় তারা ৭০টি ভবনে ঢুকে পড়ে ও ভবনগুলোর বাসিন্দাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি শুরু করে। সেনাবাহিনীর কয়েক প্লাটুন সদস্য এসে ভবনগুলো ঘেরাও করে। তারা ভবনগুলোতে ঢুকে পড়া ডাকাত সদস্যদের উদ্দেশ্যে হ্যান্ড মাইক দিয়ে বলতে থাকেন তারা যদি বের না হয়ে আসে তবে তারা ভেতরে প্রবেশ করে গুলি চালাতে বাধ্য থাকবে। এমন কথা শোনার পর ডাকাত সদস্যরা চুপ করে থাকলে সেনাবাহিনী গুলি করতে বাধ্য হয়। পরে তারা আসার চেষ্টা করলে জনগণ তাদের ধরে গণধোলাই দেন এবং ১৭ জনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন তারা। আটককৃতরা সবাই টোকাই বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। প্রায় ঘণ্টা ধরে এই অভিযান চলে। তাদের ধরতে ৭০টি ভবনের প্রতিটিতে ঢুকে পড়েন সেনারা। তখন বাইরে সাইরেন বাজছিল। পরে আরও কয়েকটি গাড়ি আসে। রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ডাকাতির এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে ডাকাত প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছেন। শুধু তাই নয় তারা এলাকাবাসীর মাঝে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ফোন নাম্বার ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যাতে খুব সহজে কল করলে ছুটে যেতে পারেন। এ-সংক্রান্ত কমিটি করা হয়েছে মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, বসিলা এবং ঢাকা উদ্যান এলাকায়। তবে এমন পরিস্থিতি থেকে বের হতে চান নগরবাসী। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে বুধবার (৭ আগস্ট) আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জান-মাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। যেকোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হানাহানি এবং প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হলে নিকটস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্পে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।