মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী:
ঢাকের বাদ্য, শঙ্খের ধ্বনি আর ধূপের ধোঁয়ায় মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে রাজশাহী মহানগর ও গ্রামের প্রতিটি পূজামণ্ডপ। মহাষষ্ঠীর পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) শুরু হয়েছে সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আগামী রোববার (১৩ অক্টোবর) বিজয়া দশমী। ওই দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদীয় দুর্গোৎসব।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে রাজশাহীর মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গা দেবীর প্রতীমা থানে ওঠানো হয়। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে এরই মধ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো রাজশাহী মহানগর। বিপুল আনন্দ, উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব উদযাপনে এবার মহানগরজুড়েই নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।
সনাতন শাস্ত্রের বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা দোলায় (পালকি) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) এসেছেন। এর ফলে মড়ক, মহামারি ও দুর্যোগ বাড়বে। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাশে (স্বর্গে) ফিরে যাবেন গজে (হাতি) চড়ে। এর কারণে শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে এই বসুন্ধরা।
বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় সায়াংকালে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে আজ উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হয়। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত রয়েছে মহানগরীর সব মণ্ডপ।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) উৎসবের দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে ভোর সাড়ে ৬টায়। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৯টায় এবং সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকেল পৌনে ৫টায় এবং সমাপন হবে বিকেল সাড়ে ৫টায় মিনিটের মধ্যেই। শনিবার (১২ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৬টায় শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। পরদিন রোববার (১৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টায় মহাদশমী পূজা আরম্ভ হবে। সকাল ৮টায় পুষ্পাঞ্জলি এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা-আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন সম্প্রদায়ের পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদীয় উৎসব।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সরকার অসীম কুমার জানান, এ বছর মহানগরের ৭৭টি এবং উপজেলার ৩৩৫টি মিলিয়ে মোট ৪১২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা চলবে। পূজা চলাকালীন সময়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আজ থেকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হলো। বিজয়াদশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদীয় উৎসব।
এদিকে দুর্গোৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে হটলাইন চালু করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। দুর্গাপূজা চলাকালে আরএমপির প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পূজা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে বলা হয়েছে। আর যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে আরএমপি হটলাইন নম্বর (টেলিফোন: +৮৮০২৫৮৮৮০১৩৫১ অথবা মোবাইল: ০১৩২০-০৬৩৯৯৯) যোগাযোগ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। সাথে ৯৯৯ সার্ভিস রয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহীতে উৎসবমুখর পরিবেশেই পূজা উদযাপন হবে। দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। খোলা হয়েছে হটলাইন। কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করলে তাকে কঠোর হাতে দমন করা হবে।
পুলিশের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতায় বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয় সেজন্য মণ্ডপগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবকিছুই মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি নিজেও পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যাবেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন। কোথাও কোন সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া রাজনেতিক দল বিএনপি ও জামায়াত- শিবিরের নেতা কর্মীরা নিজ নিজ এলাকার পূজা মন্ডপ গুলিতে পাহারায় রয়েছে। রাজশাহী বিভাগের প্রতিটা জেলার মানুষ পূজায় রাজশাহীতে পরিবার নিয়ে আসে পূজার আনন্দ ভাগভাগি করতে। তাদের কোনো সমস্যা যেনো না হয় ও রাজশাহীর সুনাম জেনো নষ্ট না হয় সেদিকে বিবেচনা করে রাজনেতিক দল গুলি সনাতন ধর্মের মানুষগুলি পাশে রয়েছে ।