অনলাইন ডেস্ক :
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালা প্রকাশ করা হয়েছে। ১৮ নভেম্বর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি প্রজ্ঞাপনে প্রফেসর তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠিত হয়।
কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু কাজ পরিপূর্ণভাবে শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে, তাই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন শেষ করতে আরও কিছু সময় প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে সরকার ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করছে। তাই স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন আলোচনা ও ঐকমত্য উপনীত হবার প্রক্রিয়াকে সহজতর করার জন্য এ কমিশনের তৈরিকৃত প্রাথমিক কিছু মৌলিক সুপারিশ এখনই সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার জন্য উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রাথমিক সুপারিশের সাথে আরও দুইটি অধ্যায়, বিশেষ করে সারাদেশে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর মাধ্যমে ৪৬,৬৮০ জন উত্তরদাতার মধ্যে পরিচালিত মতামত জরিপ এবং নির্বাচন বিষয়ক একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে।’
প্রাথমিক প্রতিবেদনে স্থানীয় সরকার গঠন, আইন অবকাঠামো, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারী প্রতিনিধিত্ব, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন সংক্রান্ত, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার, স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অর্থায়ন, স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন, স্থানীয় সরকার সার্ভিস কাঠামো, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন, স্থানীয় সরকার বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের পুনর্গঠন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ দপ্তর ও অধিদপ্তর সমূহের পুনর্গঠন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণসহ বিভিন্ন বিষয় প্রাথমিক সুপারিশমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও অন্যান্য কমিশনের সুপারিশ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সাংবিধানিক সংস্কারের সুপারিশমালা ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে জনমত জরিপ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনের বিস্তারিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালায় উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- স্থানীয় সরকার সংগঠন।
এতে বলা হয়েছে, দেশে তিন স্তরবিশিষ্ট গ্রামীণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিদ্যমান। এ সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইন ও সাংগঠনিক কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকারের নতুন কাঠামো অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যগণ পদাধিকার বলে চেয়ার ও মেয়র কাউন্সিলের নির্বাহী পরিষদের এক তৃতীয়াংশ সদস্যপদ লাভ করবেন। স্থানীয় সরকারের সকল স্তরে এবং প্রতিষ্ঠান সমুহের স্থায়ী কমিটিগুলোতে সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যগণ আনুপাতিক হারে চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। দক্ষ নারী সদস্যগণ চেয়ারপার্সন ও মেয়র, সভাধ্যক্ষ ও ছায়া পরিষদ নেতা ইত্যাদি পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করতে পারবেন।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অর্থায়ন বিষয়ে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকারকে কর আদায়ের আরও বিস্তৃত ক্ষমতা দিতে হবে। স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা বিষয়ে বলা হয়েছে, অবিলম্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট সাংবিধানিক মর্যাদাসম্পন্ন একটি ‘স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার সার্ভিস কাঠামো বিষয়ে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ পর্যায়ে দুই ধরনের জনবলের পৃথক দুটি কাঠামো আপাতত কাজ করবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন বিষয়ে বলা হয়েছে সুপারিশে। এই অধিদপ্তরে পেশাদার আমলার সাথে আর্থিক নিরীক্ষা, পারফরমেন্স অডিট, কমপ্লায়েন্স অডিট, মনিটরিং ও প্রকল্প কর্ম মূল্যায়নের দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবী নিয়োগ করা যাবে। উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানী, ফৌজদারী ও বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির আদালত স্থাপন ও বিচারক নিয়োগের জন্য এ কমিশন সুপারিশ করেছে।