মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী :
রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার মোল্লাপাড়া এলাকার সাতবাড়িয়া গ্রামের সহরাব আলীর ছেলে ইমরান হোসেন। ঢাকায় একটি ‘টপওয়ান’ নামের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কাজ শেষে সন্ধ্যা ৭টার সময় ঢাকা মিরপুর ১১ হতে গাড়ি না পেয়ে, পায়ে হেটে বাড়ি ফেরার পথে, ঢাকা মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশের ছোড়া গুলি এসে লাগে ইমরানের ডান পায়ে। পুলিশের গুলিতে পা হারিয়ে এখন চাকুরী হারা হয়ে বেকার জীবন যাপন ইমরানের।
গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় ছাত্র জনতার আন্দোলনে ওই ঘটনা ঘটে।
মিরপুর ১০ নম্বরে গুলি খেয়ে পড়ে থাকা ইমরানকে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজন মিরপুরের আলোক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা নিয়েও বাঁচানো যায়নি ইমরানের পা। অবশেষে কেটে ফেলতে হয়েছে। এদিকে গত প্রায় ২০ দিন আগে ইমরানকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, ফলে চলে এসেছেন বাসায়। বাসায় এসে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি ইমরানের এমন পরিস্থিতিতে চলছে না সংসার। বন্ধ আছে তার চিকিৎসা সেবাও। এতদিন ধার দেনা করে চিকিৎসা চালালেও এক পা হারিয়ে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ওই পরিবার।
এ বিষয়ে পুলিশের গুলিতে পা হারানো ইমরানের পিতা সহরাব আলী বলেন, আমার ছেলে আন্দোলনে সময় পুলিশের গুলি লেগে পা হারিয়েছে আমার সংসার শেষ হয়ে গেছে। আমার ছেলের জীবন বাঁচাতে আপনারা সবাই সহায়তা করুন তাকে চিকিৎসা দিন।
ওই বিষয়ে ভুক্তভোগী পা হারানো ইমরান হোসেন বলেন, জুলাই মাসের ১৯ তারিখে বাহিরে আন্দোলন চলছিল বিষয়টা আমি বুঝতে পারিনি। অফিস শেষ করে সন্ধ্যা সাতটার সময় মিরপুর ১১ থেকে গাড়ি না পেয়ে, পায়ে হেঁটে মিরপুর ১০ নম্বরে পৌঁছাতেই দেখি ছাত্ররা আন্দোলন করছে। সে সময় হঠাৎ মনে হল আমার পায়ে কেউ যেন ইটের টুকরা দিয়ে আঘাত করল কিছুক্ষণ পর দেখি রক্তে ভিজে গেছে। পরে বুঝতে পারলাম আমার পায়ে গুলি লেগেছে এবং আমার সামনেও আরো কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন চাকুরী ও আর নেই। আমার সংসারও চলছে না আবার চিকিৎসা সেবাও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। এতদিন কাছে থাকা কিছু টাকা ও ধার দেনা করে চিকিৎসা চালিয়েছি এখন আর পারছি না। চিকিৎসা চালাতে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি সহায়তার জন্য আবেদনও দিয়েছি। আমি বাঁচতে চাই আমাকে আপনারা বাঁচান।
ইমরান হোসেন আরো বলেন, আমি ভাবতে পারিনা যে আমার পা নেই। মাঝেমধ্যে ঘুম থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে বসি। আমার হাত যখনই ডান পায়ের দিকে যায় তখন আমার কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। জিজ্ঞেস করা হলে ইমরান হোসেন বলেন এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে দেখতেও আসেনি। ছাত্র আন্দোলন অথবা সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ দেখতে আসেনি কোন চিকিৎসা সেবাও দেয়নি। আমি চাই আমাকে সরকার হেল্প করুন। তা না হলে আমার ভবিষ্যৎ জীবনে স্ত্রী ও দুই সন্তান এবং অসহায় পিতাকে নিয়ে পার করা খুব কঠিন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, একটি মানবিক সাহায্যের আবেদন পেয়েছি এবং তা আমি ডিসি অফিসে পাঠিয়েছি। সরকার বর্তমানে শহীদের তালিকা করছেন। পরবর্তীতে আহতদের তালিকা করার সময় বিষয়টি দেখা যাবে।