আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের সাবেক অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে (৩৮) গ্রেপ্তার ইস্যুতে বার্তা দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। খবর এনডিটিভির।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যেখানে এই ধরনের হামলার দায়ীদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি, সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে বৈধ দাবি উপস্থাপন করা এক ধর্মীয় (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস বা ইসকন) নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার এবং জামিন অস্বীকৃতির ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তিনি বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্রও। এই ঘটনা বাংলাদেশের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক আক্রমণের পরে ঘটেছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের পাশাপাশি চুরি, ভাঙচুর এবং মন্দির ও মূর্তির অবমাননার বেশ কয়েকটি নথিভুক্ত ঘটনা রয়েছে।’
এদিকে, জামিন না মঞ্জুর হলেও ভক্তদের বিক্ষোভের মুখে কারাগারে নেয়া যায়নি অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। ফলে তার জামিন আবেদন নিয়ে আবারও শুনানির কথা রয়েছে কিছুক্ষণ পর।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত তার জামিন ও রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে কঠোর নিরাত্তায় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন চিন্ময় দাসের ভক্তরা। আদালতের আদেশের পর চিন্ময়কে কারাগারে নেয়ার চেষ্টা হলে রাস্তা অবরোধ করে তারা। ফলে তাকে নেয়া সম্ভব হয়নি।
গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গত ৩১ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলা অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন। ওইদিন চন্দন কুমার ধরসহ ৯ জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই মামলার পর ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রসঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি মামলাটি সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেন। ওই বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ওপর চালানো হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলন বর্তমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়।’