লাইফস্টাইল ডেস্ক :
বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় পানীয় গ্রিন টি। সাম্প্রতিক সময়ে এটি কেবল চায়ের তালিকায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছেও এটি প্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সময়ের সঙ্গে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে গ্রিন টি। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদের পাতা থেকে তৈরি এই চা গরম, ঠান্ডা বা গুঁড়ো আকারেও পান করা যায়। এর উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য এটি বিশেষভাবে পরিচিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রিন টির এই উপকার পেতে দিনে কত কাপ পান করা উচিত? হেলথলাইনের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কথা বলেছেন চিকিৎসক।
গ্রিন টির উপকারিতা: গ্রিন টিতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান এবং উদ্ভিজ্জ যৌগ রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্যাটেচিন নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি পানকারীরা অনেক ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমান।
বিশেষ করে পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সার এবং নারীদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে গ্রিন টি কার্যকর হতে পারে। এছাড়াও, এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। গ্রিন টির ক্যাফেইন এবং ক্যাটেচিন আপনার মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতেও সহায়ক। এটি প্রতিদিন ৭৫–১০০ ক্যালোরি বাড়তি পোড়াতে সাহায্য করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে, দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং আর্থ্রাইটিস, অ্যালঝাইমার ও পারকিনসনের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।
দিনে কতটা গ্রিন টি পান করা উচিত: অনেকেই স্বাস্থ্যের কথা ভেবে গ্রিন টি পান করেন। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত চা পান করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। গ্রিন টির উপকারিতা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেন, দিনে এক কাপই যথেষ্ট, আবার কেউ পাঁচ বা তার বেশি কাপ পান করার পরামর্শ দেন। চিকিৎসক এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে উপকারীতার পেতে কীভাবে গ্রিন টি পান করতে হবে সে বিষয়ে জানিয়েছেন।
বিভিন্ন রোগভেদে গ্রিন টির পরিমাণ:
- মুখগহ্বর ক্যান্সার: দিনে ৩-৪ কাপ গ্রিন টি পান করলে মুখগহ্বর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
- প্রস্টেট ক্যান্সার: দিনে ৫ বা তার বেশি কাপ গ্রিন টি পান করলে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
- স্তন ক্যান্সার: দিনে ৩ বা তার বেশি কাপ পান করলে স্তন ক্যান্সার পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি কমে।
- ডায়াবেটিস: দিনে ৬ বা তার বেশি কাপ পান করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৩% কমে।
- হৃদরোগ: দিনে ১-৩ কাপ গ্রিন টি পান করলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
গবেষণাগুলোর উপর ভিত্তি করে বলা যায়, দিনে ৩-৫ কাপ গ্রিন টি পান করাই আদর্শ। তবে এর প্রভাব ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে।
অতিরিক্ত গ্রিন টি পানের প্রভাব: যদিও গ্রিন টি স্বাস্থ্যকর, তবে খুব বেশি পান করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এতে থাকা ক্যাফেইন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ বা পাকস্থলীর অস্বস্তি হতে পারে। তাই সীমিত পরিমাণে পান করাই ভালো।
গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারি। তবে সবকিছুর মতোই এর পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হন এবং দৈনন্দিন জীবনে গ্রিন টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে চান, তাহলে দিনে ৩-৫ কাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাই উত্তম।