অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো এখন বাড়তি জ্বালানির খরচ ও দীর্ঘতর যাত্রাপথের মুখোমুখি হচ্ছে, কারণ পাকিস্তান তাদের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। কাশ্মীরের পাহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নয়াদিল্লি হামলার জন্য পাকিস্তানি উপাদানগুলোকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এই পারমাণবিক শক্তিধর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতীয় এয়ারলাইনগুলোর জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া।
পাকিস্তান জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা ২৩ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়।
এই আকাশসীমা বন্ধের প্রভাব বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দেখা গেছে, যখন এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো নিউইয়র্ক, আজারবাইজান ও দুবাইয়ের মতো গন্তব্যে যাওয়া ফ্লাইট বিকল্প পথে চালানো শুরু করেছে, যেগুলোর স্বাভাবিক রুট সাধারণত পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে থাকে। ফ্লাইট পর্যবেক্ষণ সাইট ফ্লাইটর্যাডার টোয়েন্টিফোর এ খবর জানিয়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিমানবন্দর হবে নয়াদিল্লি, যা বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর একটি। এখান থেকে বহু ফ্লাইট পশ্চিম ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা করে পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করে।
ক্রিয়াম অ্যাসেন্ডের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া ও এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস মিলে প্রায় ১ হাজার ২০০টি ফ্লাইট নির্ধারিত রয়েছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকার জন্য।
নয়াদিল্লি থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটগুলো এখন এক ঘণ্টার বেশি সময় ঘুরপথে যেতে বাধ্য হবে। এর ফলে জ্বালানির খরচ বাড়বে এবং বাড়তি জ্বালানি বহনের কারণে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে, বলেছে এক ভারতীয় বিমান সংস্থার এক্সিকিউটিভ, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
ইন্ডিগো জানিয়েছে, ‘আরও কিছু উত্তেজনাপূর্ণ পদক্ষেপ’ এর কারণে তাদের কিছু ফ্লাইট প্রভাবিত হবে। অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ‘উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের’ কিছু ফ্লাইটকে বিকল্প দীর্ঘ রুটে পরিচালনা করতে হবে।
লাই ফ্রোম অ্যা লঞ্জ ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা অজয় আওয়াতানী বলেন, ‘দিল্লি থেকে সবচেয়ে বড় দীর্ঘ ও অতিদীর্ঘ ফ্লাইট নেটওয়ার্ক থাকায় এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এয়ার ইন্ডিয়া।’
একজন ভারতীয় এয়ারলাইন পাইলট রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপে সময়সূচিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী উড়ান সময় পুনঃগণনা করতে হবে। সেই অনুযায়ী কেবিন ক্রু ও পাইলটদের তালিকাও নতুন করে সাজাতে হবে।
অন্য এক এয়ারলাইন এক্সিকিউটিভ জানিয়েছেন, প্রভাব বিশ্লেষণ করতে তাদের কর্মীরা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন।
তারা দুজনই নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য দেন, কারণ তারা সংবাদমাধ্যমে কথা বলার অনুমতিপ্রাপ্ত নন।
ফ্লাইট অ্যায়ার এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ইন্ডিগো ফ্লাইট ৬ই১৮০৩ দিল্লি থেকে বাকুতে যেতে ৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সময় নেয়, ঘুরপথে গুজরাট হয়ে আরব সাগর পেরিয়ে ইরানের উপর দিয়ে আজারবাইজানে পৌঁছায়। অথচ বুধবার একই ফ্লাইট পাকিস্তান আকাশসীমা ব্যবহার করে পৌঁছাতে সময় নিয়েছিল মাত্র ৫ ঘণ্টা ৫ মিনিট।