মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী :
রাজশাহীতে ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদের খুনিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে চিকিৎসকরা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শিক্ষক, চিকিৎসক ও ছাত্র-ছাত্রীদের আয়োজনে বুধবার (৩০ অক্টোবর) বেলা ১১ টার দিকে মেডিকেল কলেজ সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ন্যাশনাল ডাক্তার ফোরাম (এনডিএফ) এর সাধারণ সম্পাদক ডা: এম মুর্শেদ জামান মিঞা।
তিনি বলেন, গত ২৯ অক্টোবর-২০২৩ ইং তারিখ, ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদ নির্মম ও নৃশংসভাবে খুন হয়েছে। তিনি উত্তরাঞ্চলের বিখ্যাত একজন চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। রাজশাহী লক্ষিপুরে পপুলার হাসপাতাল থেকে গত ২৯ অক্টোবর-২০২৩ তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক পৌনে ১২ টার দিকে রোগী দেখা শেষ করে চেম্বার থেকে মোটরসাইকেল যোগে উপশহরের নিজ বাসায় ফিরছিলেন। এমন সময় রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকা খুনিরা মাইক্রোবাস যোগে পিছু নেয়, বর্ণালী মোড়ের পশ্চিম দিকে শ্রম আদালতের বিপরীতে মেসার্স কোরাইশি থাই-এলুমনিয়াম দোকানের পাশে গতিরোধ করে মাইক্রো দিয়ে ধাক্কা দিলে ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদ ফুটপাতের উপর পড়ে যায়।
এসময় খুনিরা অতিদ্রুত মাইক্রোবাস থেকে নেমে তার বুকে পরপর তিনটি ছুরিকাঘাত করে আবারও মাইক্রোযোগে পালিয়ে যায়। তার মোটরসাইকেল চালক শাহীন ও অন্যান্য পথচারীরা রক্তাক্ত অবস্থায় ডা. কাজেমকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত ডা. কাজেমকে দ্রুত আইসিইউতে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। আইসিইউতে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকবৃন্দ ডা. কাজেম কে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
পরদিন সোমবার সকালে পুলিশের সুরাৎহাল প্রতিবেদন ও ফরেনসিক ময়না তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী এটি পেশাদার খুনিদের হাতে একটি নিখুঁত খুন বলে উল্লেখ করা হয়। এ নৃশংস খুনের প্রতিবাদে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিক্ষোভ ও মানবন্ধনসহ নানান কর্মসূচী পালন করেন। ডা. কাজেম হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে টানা কয়েকদিন বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়।
এ নৃশংস খুনের বিচার চেয়ে রাজপাড়া থানায় ৩০ অক্টোবর-২০২৩ ইং তারিখ ডা. কাজেমের স্ত্রী ডা. ফারহানা ইয়াসমিন সোমা একটি খুনের মামলা দায়ের করেন। খুনের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মামলার কোন অগ্রগতি চোখে পড়ার মত বা দৃশ্যমান হচ্ছে না। রাজশাহী শহরকে শান্তির শহর বলা হয়, জানমালের নিরাপত্তার জন্য এ শহরে শত শত সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। যে স্থানে ডা. কাজেম খুন হয়েছে সেখানেও সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল ও আছে।
তিনি আরো বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এ খুনের ঘটনা তদন্ত করেছেন, কিন্তু ফ্যাসীবাদীর দোসররা আসামী গ্রেপ্তারে কোন সহযোগীতা না করে বরং অজ্ঞাত কোন কারণে তার বিলম্ব ঘটিয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত এ নৃশংস খুন সম্পর্কে কোন অগ্রগতি বা বিষয় জানতে পারছিনা। পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের বাবা যোগাযোগ করলে পিবিআই কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়েছে বলে জানাতে পারেননি।
আমরা আশংকা করছি, এ খুনের কোন সুষ্ঠু বিচার আমরা পাবো কি না। কারন দীর্ঘ এক বছর সময়কাল অতিবাহিত হলেও কোন ধরণের সামান্যতম অগ্রগতি আমাদের জানানো হচ্ছে না। এ খুনের সাথে কারা জড়িত তা জানতে চায়। তার স্ত্রী-সন্তানেরাও জানতে চায় খুনি কে? কেন খুন করা হলো? পরিবর্তীত রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে তাই আজ আমরা নিহত ডা. কাজেমের বাবা মা, স্ত্রী সন্তান, ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন ও সর্ব স্তরের চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ডা. কাজেমের খুনিদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবী জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন হতে অভিযোগ তুলা হয়েছে, এই হত্যা কান্ডের সাথে রাষ্ট্রযন্ত্র, রাজনৈতিক মহল জড়িত থেকে পেশাদার খুনিদের দিয়ে এমন হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। যারা তদন্তে জড়িত আছে তারা সুষ্ঠ তদন্ত না করে অবহেলা করছে।
এছাড়াও একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে ঘটনার যে সিসিটিভি ফুটেজ ছিলো তা তদন্ত সংস্থা পিবিআই কাট করে নিয়ে গেছে। ফুটেজের আগের ও পরের অংশ রেখে গেছে। সেই বিষয় গুলো নিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে গেলে কর্ণপাত করছে না। বরং আমরা যারা এই পেশার সাথে জড়িত আছে তাদেরইে বারবার বলা হয়েছে আপনার নিজেরা সাবধানে চলাফেরা করুন। তাদের এই কথা বর্তায় আমরাও নিজেরা আতঙ্কে থেকে চলাফেরা করেছি। এমনকি ভাড়া করা গান ম্যান দিয়ে চলতে হয়েছে। আমরা নিজেরা এখনো নিরাপদ নই। এতেই বুঝা যায় এই হত্যা কান্ডের সাথে কারা জড়িত আছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আরো জানানো হয়, এখন একটি নিরপেক্ষ সরকার আছে। আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করবো তদন্ত কোনদিনে যাচ্ছে। যদি বুঝতে পারি কোন বিচার পাওয়ার আশঙ্কা নাই বা একটি খুনের রহস্য উন্মোচন হচ্ছে না তাহলে আমরা ঐক্যবন্ধ হয়ে কর্মবিরতির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে কঠোর আন্দোলন করার হুশিয়ারী প্রদান করা হয়।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ন্যাশনাল ডাক্তার ফোরাম (এনডিএফ) এর রাজশাহী সভাপতি অধ্যাপক ডা: কাজী মহিউদ্দিন আহমেদ, ডাক্তার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিএবি) সভাপতি ডা: ওয়াসীম হোসেন, এনডিএফ রাজশাহীর সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ডা: জাহাঙ্গীর আলম।