মো: সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী:
রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পুঠিয়া উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলা প্রশাসন ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ পুকুর খনন। পুকুর খনন এ ব্যনিজ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সুবিধা দিতে প্রশাসন মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে অলিখিত অনুমোদন দিচ্ছেন। কৃষকরা এসব বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়েও পাচ্ছেন না।
স্থানীয়রা স্পেসিফিক তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করলেও নানা ব্যস্ততার কথা বলে কালক্ষেপণ করতে দেখা গেছে উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশকে। তাঁরা ম্যানেজ হওয়ার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে পুকুর খনন করলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না উপজেলা প্রশাসন। তাঁরা নিরব ভূমিকায় আছেন। স্থানীয়রা বলছেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুল ইসলামকে অবৈধ পুকুর খনন বিষয়ে অবগত করেও প্রতিকার মিলছে না এ উপজেলায়। রাজশাহীর পুঠিয়ায় শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া গড়াগাছি বিলে ফসলি জমি নষ্ট করে অবৈধভাবে চলছে পুকুর খননে একই অবস্থা সেখানকার প্রশাসনের।
অভিযোগ উঠেছে, ১২ ডিসেম্বর আতাহার নামক এলাকায় আবাদি জমি কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছিলেন আসলাম খান নামক জনৈক ব্যক্তি। এতে বাধা দেন গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই আলতাফ হোসেন। এসআই আলতাফ সেসময় তাঁদের বলেন, আমাদের উৎকোচ না দিয়েই আপনাকে মাটি ওঠাতে কে বলেছে? । আপনি থানায় দেখা না করে আর গাড়ী চালাবেন না, বলে তিনি স্থান ত্যাগ করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুধু মাটি কাটতে নিষেধ করেছি। সেটা যদি না করা যায় আমরা আর নিষেধ করবো না। এগুলো উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব।
একই থানার এসআই কুদ্দুস এর ব্যতিক্রম নয়। তিনিও ১৩ ডিসেম্বর আমতলার কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির গাড়ীর চাবি কেড়ে নেন এবং বলেন, আমার সাথে কথা না বলে তোমার মাটি কাটার সাহস কি করে হলো।
তর্কাতর্কীর এক পর্যায়ে উভয়ে সেখান থেকে সরে যান। এসআই কুদ্দুস বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তদন্ত ওসি মোয়াজ্জেম তাকে থানায় দেখা করতে বলেছিলেন নিষেধ করার জন্য।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনাদিঘী এলাকায় অবৈধ পুকুর খনন চলমান অবস্থায় এসিল্যান্ড অভিযান চালিয়ে স্কেভেটরের ৪ টি ব্যাটারী জব্দ করেন। পরে একই পুকুর খননে আবারও তিনি মৌখিক অনুমতি প্রদান করেন। স্থানীয়রা বলছে প্রশাসন টাকা না পেলে পুকুর খননে বাঁধা সৃষ্টি করে আর টাকা পেলেই সেদিকে চোখ তুলে তাঁকায় না।
গোদাগাড়ী’র জোতজয়রাম মৌজায় চাষাবাদযোগ্য জমি কাটছেন সিএনবি এলাকার ইয়ার খান নামক জনৈক ব্যক্তি। উক্ত অবৈধ খননের বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় তাকে। এতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুকুর খনন করতে অনুমতি লাগে কে বলেছে আপনাকে? যাদের সাথে কথা বলা দরকার আমি বলেছি? যাঁদের ম্যানেজ করার করেছি। আপনারা অন্য বিষয় দেখেন। এসব আপনাদের দেখতে হবে না।
পুঠিয়ায় ৩৫ থেকে ৪০ বিঘা ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বিএনপির প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে এলাকাবাসীর নিকট জানা যায় ,পুকুর খনন করছে তাহেরপুরের সাবেক মেয়র মিন্টু, স্থানীয় বিএনপি নেতা রউচ আর দেখাশোনা করছে হান্নান। তিনিই ভেকুর মালিক। ফসলি জমিতে রাতের আধারে পুকুর খনন করা হলেও এই প্রভাবশালীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয় অসহায় কৃষকরা। সংবাদে প্রকাশ হলে প্রশাসন ভেকুর ব্যাটারি জব্দ করলেও রহস্যজনকভাবে ২-৩ দিন পরে আবারও ব্যাটারী চলে আসছে ক্ষমতাধরদের হাতে। গত ১৫ বছরে পুঠিয়ায় শত শত বিঘা জমি খনন ও সেটার একাধিক সংবাদ প্রকাশ হলেও পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি কারো নামে মামলা। খননকারীকে চাপ দিয়ে জমি পূর্ণ ভরাটের ব্যবস্থা নেয়নি পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন নীরব থাকায় অন্যান্য মানুষ সাহস পাচ্ছে ফসলি জমি খনন করার। কেউ কেউ আবার টাকার বিনিময়ে পুকুর খননের ব্যবসা খুলে রেখেছে বলে জানায় স্থানীয় জনগণ।
গোদাগাড়ীর আবদুল মতিনের অভিযোগ করে বলেন, আমি ১০ ডিসেম্বর অনাবাদি জমি কেটে আবাদযোগ্য করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। আমি এখনো অনুমোদন পাইনি। অথচ এসিল্যান্ডের অভিযানে বন্ধ হওয়া পুকুরের আবেদন আমার ২ দিন পর করেও সে অনুমতি পেয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, আমাদের এইসব জমিতে অনেক ভালো ধান, পাট, ভুট্টা হতো কিন্তু তারা এসব জমি কৃষকদের বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে কৌশলে তাদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিয়ে পুকুর খনন করছে। কেউ জমি দিতে রাজি না হলে তাদের ভয় ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে । এতে আমাদের যেমন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। আমরা প্রানের ভয়ে তাদের কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা। আমার জমির পাশে পুকুর হলে জমিতে ফসল ঠিক মত আসবেনা বলে বাধ্য হয়ে জমি কম টাকায় দিতে হচ্ছে।
থানা পুলিশের বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি বলেন, আপনারা তথ্য দিয়েছেন আমরা সুবিধা মত দেখবো বিষয়টি। পুঠিয়া উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা দেবাশীষ বসাক বলেন, গোড়াগাছি বিলে ফসলি জমিতে পুকুর খননের তথ্য পাওয়ার পর থানা পুলিশ সাথে নিয়ে সেখানে আমরা অভিযান চালায়। কিন্তু আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পুকুর খননকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে আমরা গাড়ির ব্যাট্যারি জব্দ করে নিয়ে আসি। ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পুঠিয়া ইউএনও ফোন রিসিভ না করলেও গোদাগাড়ী’র ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, আমরা শুধু পুকুর নিয়ে পড়ে থাকবো নাকি? সময় পেলেই তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো?
এসব বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।