অনলাইন ডেস্ক :
নানা চড়াই–উতরাই পেরিয়ে অবশেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, লন্ডন ক্লিনিকে হবে তাঁর চিকিৎসা। চিকিৎসকরা প্রয়োজন মনে করলে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রেও নেয়া হতে পারে। শারীরিক সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, কাতারের রাজধানী দোহা হয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নামার পর খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হবে। সেখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসার বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেবেন।
লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি ও উচ্চ মাত্রার ডায়াবেটিকসহ নানা রকম অসুখে ভুগছেন ৭৯ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার বিদেশে যাওয়ার আবেদন করা হলেও, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বাধায় সেটি হয়নি।
নানা জটিল রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করছিল বিএনপি। দলটি এই দাবিতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেও ওই সময় সরকারের কাছে বারবার আবেদন করা হয়, কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সব দ্বার উন্মুক্ত হয়। খালেদা জিয়া মুক্তি পান। একই সঙ্গে তাঁর উন্নত চিকিৎসার প্রস্তুতি শুরু করে বিএনপি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকবার তারিখ পরিবর্তন করে অবশেষে তিনি রাতে লন্ডনে যাচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার এই চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আবেগ কাজ করছে। জেল জীবনের একাকিত্ব ও সুচিকিৎসা না দিয়ে পতিত শেখ হাসিনার সরকার খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলো বলে অভিযোগ করে আসছেন দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।শারীরিক সুস্থতার জন্য দেশবাসী যে বিভিন্ন সময় দোয়া করেছেন, সেজন্য খালেদা জিয়া দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। জাহিদ হোসেন বলেন, আগামীতে যাতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারেন তার জন্য ম্যাডাম দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনিও দেশবাসীর জন্য দোয়া করছেন।
তিনি বলেন, লন্ডন ক্লিনিক নামে একটি পুরানো হাসপাতাল আছে, সেখানে ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) ভর্তি করানো হবে এবং চিকিৎসা চলবে। এই হাসপাতালে ম্যাডামের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। তাদের পরামর্শে চিকিৎসার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মাল্টিডিসিপ্লিনারি এই হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে।
খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. জাহিদ বলেন, ম্যাডামের যে বয়স এবং তাতে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে যাওয়ার পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সেখানে (লন্ডন ক্লিনিকে) এই সুবিধা আছে। সুতরাং তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে।
আমেরিকায় চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি তারা (লন্ডন ক্লিনিক) সুপারিশ করে যে তাঁকে নিতে হবে, তাদের এখানে ব্যবস্থা নেই; জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপিটালে নিয়ে যেতে হবে, তখন হয়তো যাওয়ার একটা প্রশ্ন আসে।
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আবেগ ও উদ্দীপনা কাজ করছে। বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। বিএনপি নেত্রী যে পথ দিয়ে বিমানবন্দরে যাবে তার দুপাশেই থাকবেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
এর আগে গত রোববার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। জানা গেছে, সেই সাক্ষাতে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। শীর্ষ নেতারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করেন। শত জুলুমের পরও তিনি যে ভেঙে পড়েননি তা তুলে ধরে দ্রুত চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।