মোঃ সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সমেয়র ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আয়েন উদ্দিন। তখন মেসে থেকে পড়া-শোনার খরচটুকুও চালানোর মতো সাধ্য ছিল না পরিবারের সদস্যদের। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়েও তেমন কোনো আয় ছিল না অন্য নেতাদের সাহায্যে দিন চলতো। তবে হঠাৎ আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়ে যায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিনকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিনকে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান আয়েন উদ্দিন। এখন তার শতবিঘা জমি, ঢাকা ও রাজশাহীতে বাড়ি, জমি, আলিশান গাড়ি, গ্রামে তিনশত বিঘা পুকুর, পুকুর পাড়ে আলিশান দোতলা বাড়ি। পুকুরের জমিগুলোর অধিকাংশ এলাকার সাধারণ কৃষকদের নিকট থেকে জোর করে নিয়ে খনন করেছেন তিনি। কোন কৃষক থেকে জমি কিনলেও দেইনাই প্রাপ্য মূল্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য করে সবমিলিয়ে অন্তত দুই শ কোটি টাকার মালিক আয়েন উদ্দিন। রাজশাহীর রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, শুধুমাত্র ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হওয়ার কারণে আয়েনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। টানা দুই বার দলীয় মনোনয়নে এমপি হয়ে এখন কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। অথচ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আয়েন উদ্দিনের হলফনামায় ছিল মাত্র ২ বিঘা কৃষি জমি। আর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেই আয়েন গত ৫ আগস্ট পলাতকের আগে অন্তত দুই কোটি টাকা মূল্যের গাড়িতে ঘুরতেন।
অনুসন্ধানে আরোও জানা গেছে, শুধু আয়েন উদ্দিনই নয়, তার মতো ছাত্রলীগের নেতা থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এমন নেতার সংখ্যা রাজশাহীতেই আছে অন্তত ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামান রেন্টু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, সাবেক সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোমিন, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবু সালেহ, মহানগর যুবলীগের সাবেক সভাপতি রমজান আলী, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চু প্রমুখ। এদের সবরাই এক সময় তেমন কিছুই ছিল না। কিন্তু এখন একেকজন শত কোটি টাকার মালিক। সবচেয়ে বেশি টাকার মালিক হলেন, রোকনুজ্জামান রেন্টু, আবু সালেহ ও রমজান আলী।
এদের মধ্যে রোকনুজ্জামান রেন্টু রাজশাহীর সাবেক পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেনের মাধ্যমে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। এছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তগত সহকারী সাইফুজ্জামান শেখরের মাধ্যমে বদলি বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবু সালেহ টেন্ডার বাণিজ্য এবং যুবলীগের সভাপতি হয়ে দলীয় পদ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর রমজান আলী রেলওয়ের টেন্ডার বাণিজ্য এবং জমি দখল করে অন্তত তিনশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি একসময় কাঠমিস্ত্রি ও বাসস্ট্যান্ডের টোকাই ছিলেন।
রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছাত্রলীগের পদে গিয়ে এখন রাজশাহীতেই ২০-২৫ জন আছেন শত কোটি টাকার মালিক। তারা পরবর্তিতে জেলা বা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের পদ বাগিয়ে বা এমপি হয়ে শত শত কোটি টাকা কামায় করেছেন। এমনকি ছাত্রলীগের নেতা থাকা অবস্থায়ও অনেকে কোটি টাকা কামায় করেছেন টেন্ডার বাণিজ্য, দখল বাণিজ্য করে। আমার পদ থাকা সত্ত্বেও নীতি ও বিবেক নিয়ে কাজ করায় আজো আমি শূন্য। দল ক্ষমতায় থাকাকালীনও ধাক্কা খাইতাম এখনোও খাচ্ছি। তবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হোক এটা আমি চাইনি।